( বম উপজাতীয় ভাষায় ‘লাইখাত’ মানে ১১। আমরা ১১জন। বলছি কেওকারাডং থেকে ফেরত আসার পর কথা )
গতদিন কেওকারাডং থেকে ফেরার পর আমরা সবাই বেশ ক্লান্ত। কিন্তু সকাল সকাল উঠে পরেছি। আমরা বগালেক থেকে হেটে নামব রুমাবাজার পর্যন্ত। এটাকে বলে ‘ঝিরিপথ’। পাথর এর উপর ঝরণার বয়ে যাওয়া পথ। এরকম পথে হাটবো শুনে আমরা অনেক উত্তেজিত। ( আমাদের সাথের এক টিম এ পথ হেটে উঠে এসেছিল। আমাদের এতো সাহস ছিলনা। কিন্তু হেটে নামতে তো পারবো। )
বিদায় বগালেক। বিদায় সিয়াম দিদি।
আমাদের যাত্রা শুরু বগালেক হাফ চক্কর দিয়ে। চোখে পড়ল real পাহাড়ী গ্রাম। আফসোস হচ্ছিল যে বগালেক এর পাশে না থেকে এইসব ঘরে থাকতে পারলে আরো interesting হত। আমরা নামছিলাম চিকন পাহাড়ী পথ বেয়ে।
আমাদের পেপে বিরতি। এই পেপের একটা কাহিনী আছে। আমরা বগালেক থেকে আসার সময় গাইড এই পেপে হাতে করে আনতে চাচ্ছিল না। পরে জানা গেল এই গ্রামে গাইড এর galfrand আছে। সে galfrand এর সামনে দিয়ে পেপে বয়ে নিতে পারবেনা। :P
খোলা পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে খানিকটা হাটার পর। ঢুকে পরলাম বুনো পথে। খানিক পরপর ঠান্ডা একটা বাতাসের ছোয়া। আর দেখা পেলাম সেই ঝিরিপথ এর। বড় বড় পাথরের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঝরণার পানি।
এই ইস্পিশিয়াল পথে হাটার জন্য আমাদের ইস্পিশিয়াল প্লাস্টিকের জুতা (বড় খাজ ওয়ালা) আর বাশের লাঠি।
গতদিনের চেয়ে অনেক আরামের পথ চলা আজকে। কারন বনে গাছের ছায়া। দারুন একটা পুল এর এখানে এসে আমরা থামলাম।
আমার গাইড তা বেশ চালু। অন্তত ছবি তোলার ব্যাপারে। not only সে আমাদের গ্রুপ ছবি তুলে দিয়েছে but also সে camera on/off করতে পারে, একবার নিচ থেকে একবার উপর থেকে বিভিন্ন pose & angle এ সে ছবি তুলেছে। পাহাড়ে এসে এইরকম expert photgrapher পাবো ভাবিনি :P
প্রথমে ঝিরিপথ আর বনের মাঝ দিয়ে হাটার সময় মনে হচ্ছিল পথ যেনো আর শেষ না হয়। কিন্থ তেল এর তো একটা limit আছে। আমার তেল limit এর কাছাকাছি চলে আসছে। কয়েকটা দোকান পেলাম। ডিম আর কলা পাওয়া যায়। তাই সই।
(pt to be noted ডিমের দাম ১০৳ এইজন্য এইখানের মুরগীর ব্যাপক ভাব )
এই পোলাটা দোকানে বসে থাকা এক উপজাতীয় মহিলার। ছবি তুলতে গেলাম। “এক দাড়িওয়ালা বেটা কালো একটা কিছু তাক করেছে” দেখে বেচারা ভয়ে ভ্যা.. ভ্যা.. আমি পালাইছি।
ঝিরিপথ এর পানি গুলো এখানে এসে বড় ধারা হয়ে ছোট নদী হয়েছে। নদীর তলায় কোথাও পাথর কোথাও বালি। আমরা হাটছি নদীর পথ ধরে। আবার কখনো নদী পার হচ্ছি হেটে। সচ্ছ পানি। এই পানিতে পা ফেলে মনে হচ্ছিল স্নিগ্ধ বাতাস এর তুলনা করলে একে স্নিগ্ধ পানি বলা যেতে পারে। আমরা লোকালয়ের কাছে তাই মাঝে মাঝে চোখে পরছে উপজাতীয় মেয়েরা মাছ/শামুক ধরছে আর আমাদের ঘুরে ঘুরে দেখছে।
ছবি তোলার ব্যাপারে এইখানের উপজাতীয়রা কেউ কেউ interested. দীপু ভাইকে একদল উপজাতীয় মেয়ে ঘিরে ধরেছে camera তে ছবি দেখানোর জন্য। উনি আবার এক উপজাতীয় গ্রামে এক মহিলার বিকট ঝারি খেয়ে এসেছেন।
অনেকটা সমতল পথ পার হয়ে এসেছি। এখন আবার একটা পাহাড় পার হয়ে রামুবাজার ঢুকতে হবে। ৬ ঘন্টা হাটার পর এখন আবার পাহাড়? হাপড় চোপড় করে উঠলাম।
রুমাবাজার পৌছুলাম প্রায় ৩ টায়। সবাই খাবার খেতে ঢুকলো। আমার পাহাড়ী দা খুব মনে ধরেছে। আর দীপু ভাই এর উপজাতীয় তামাক খাওয়ার পাইপ। আমরা এই দুইটা খুজতে লাগলাম। বাজারের পাহাড়ী দা টা গাইড এর দা টার মত না, অন্য একটা দা কিনলাম, বাঙ্গালী দা :P
৪টা বেজে গেলো কিন্তু আমরা রুমাবাজার ছাড়তে পারলাম না। চান্দের গাড়ির regular trip চলে গিয়েছে অনেক আগেই। এখন চান্দের গাড়ি ভাড়া করলেও আর্মি যেতে দিবেনা। তাই একটা হোটেল এ উঠলাম। আমার অবশ্য ইচ্ছা ছিল স্থানীয় উপজাতীয়দের পাড়ায় থাকার। কিন্তু এইখানে উপজাতীয়দের ওখানে থাকা strictly forbidden.
আর চান্দের গাড়ি ফেল করে বেড়ে গেলো আমার টুর এর আরো একটা দিন….
সুন্দর পুষ্ট
ReplyDelete